চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে নিহতের মায়ের করা অভিযোগ আমলে নিয়ে তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আট পুলিশ সদস্য, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার পিএসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদী অভিযোগ করেন। আদালত ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করেন।
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে আমিন জুট মিল এলাকায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে জয়নাল আবেদীন মারা গিয়েছিল বলে তখন পুলিশ জানিয়েছিল। জয়নালের সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযানে গেলে তারা গুলি চালায় এবং জবাবে পুলিশও ‘আত্মরক্ষায়’ গুলি করেছিল বলে দাবি করেছিল পুলিশ। জয়নালের বিরুদ্ধে দুটি মামলা ছিল বলেও সে সময় দাবি করা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি মারধরের মামলায় অন্য এক আসামি মো. জয়নালকে ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত’ দেখিয়ে অব্যাহতির সুপারিশ করে বায়েজিদ থানার পুলিশ। তখনই জয়নাল আবেদীনের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার বিষয়টি আবার গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে। এর পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনার নিহত জয়নাল আবেদীনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. মহিউদ্দিন মুরাদের আদালত ঘটনা তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনারকে (উত্তর) ২৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছেন। যে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে তারা হলেন- এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাছিম হোসেন, কনস্টেবল ফোরকান, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী, তার সহকারী শামসু, স্থানীয় ইলিয়াস ও মিঠু কুমার দে। মামলায় অপর অভিযুক্তরা হলেন- বায়েজিদ থানার সে সময়ের ওসি আতাউর রহমান খন্দকার, এসআই নোমান, এসআই দীপঙ্কর, পুলিশ সদস্য আলাউদ্দিন, কনস্টেবল মাসুদ রানা, স্থানীয় বাসিন্দা হারুন ও লাল সুমন।
মামলার বাদী নিহত জয়নাল আবেদীনের মা জোহরা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেন, ৩১ আগস্ট রাতে কাউন্সিলরের পিএস শমসু বাসায় আসে। সে জয়নালের সঙ্গে কথা বলে চলে যাওয়ার পর গভীর রাতে মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও জিপ নিয়ে ২০-৩০ জন পুলিশের লোক এসে আমার ছেলেকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে থানায় গেলেও ছেলেকে খুঁজে পাইনি। পরে রাতে থানায় গিয়ে ছেলেকে দেখি। কিন্তু তারা আমার সঙ্গে ছেলেকে কথা বলতে দেয়নি। ১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে তিনজন লোক এসে বলে ছেলের জন্য রক্ত লাগবে।
জোহরা বেগম বলেন, এতদিন ভয়ে মামলা করতে পারিনি। আমার তিনটা মেয়ে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহযোগিতায় আজ মামলা করেছি।
আইনজীবী অরবিন্দু দাশ চৌধুরী জানান, ৩০২ ও ৩০৭ ধারায় হত্যার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।
আদালতের এক কর্মকর্তা জানান, আদালত ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
Leave a Reply